শুধু #housewife
-কী করো? কিছু না
-কী করিস রে? এই ঘরের কাজ
-কী করা হয়? শুধু Housewife
-কী করো মা? এই জীবনে কিছুই তো করে উঠতে পারলাম না স্যর।
ডাক্তারিতে রুগীর নাম, বয়সের পরে জীবিকা কী জিজ্ঞাসা করার একটা অভ্যাস প্রচলিত। History taking এর প্রথম ধাপ। এরপর আসে অন্যান্য প্রশ্নবাণ। তাই কী করর উত্তরে কেউ যখন চোখ নামিয়ে মলিন মুখে বলেন “কিছুই না” তখন সত্যিই খুব খারাপ লাগে। যে মেয়ে বাড়ির সব কাজ দেখভাল করে, সবার দিকে যার নজর-তবুও সে কিছু করে না। এত কাজ যে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করছে, তাও কেন তাঁর এই হীনমন্যতা? কিন্তু এই “শুধু Housewife-দের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে। আমার ঠাকুমা, দিদিমা, মা সবাই সেই অর্থে শুধু Housewife।
ঠাকুমার কথা আমার বিশেষ মনে নেই। কিন্তু দিদা ছিল আমার খুব কাছের, মায়ের থেকেও। আমার প্রথম girl friend. আমার প্রথম প্রেমপত্র দিদাকে লেখা, ৭ বছর বয়সে। সেবার গরমের ছুটিতে মামার বাড়ি যেতে পারিনি। তাঁর সব রাগ। দুঃখ, ক্ষোভ জড়ো করে দিদাকে লিখলাম,
শ্রীচরনেষু দিদা, তোমাকে না দেখতে পেলে আমি বাঁচবো না।
অনেকদিন অবধি জানতাম, দিদার নাম “ওগো শুনছো” আর গিন্নিমা। দিদার অন্নপূর্ণা আর আদরের “অন্ন” নামটা কোথায় হারিয়ে গেছিল। ছেলে-মেয়ে, বউমা, আমবাগান, পুকুরপাড়, গোয়ালঘর-সব নিয়ে দিদার জমজমাট সংসার।আর সব সামলাচ্ছে আমার শুধু housewife দিদা। সংসারের সব কাজ শেষ করে দিদা যখন খেতে বসতো তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। পড়ন্ত রোদে চিকচিক করতো দিদার এক ঢাল রূপোলি চুল। আর পাশে বসে শোনাতাম সারা দিনের কিসসা। দিফান মামু আজ ছোট বাছুরটাকে দুধ খেতে দেয়নি। বড়মাইমা বলেছে, ভুতিদিদির মাজা বাসনে ছাই লেগে ছিল, আমার জলখাবারের আলুমরিচটা ঠান্ডা ছিল, ছোটোমাসি আজ কলেজ থেকে দেরি করে আসবে। মনে হয় জ্যোতিতে “বই” দেখতে যাবে। আমার জন্য মিনিবয় আইসক্রিম আনবে। তোমাকে যে জানালাম, তার জন্যও কি আর একটা আইসক্রিম পাবো? এই ভাবেই চলতো আমাদের বকবকানি। আমাদের বাড়িতেও বড়মা, মেজমা, ন-কাকিমা, মা সবাই গৃহবধূ। সবাই সংসার নিয়ে সুখী। যদিও রাগের মাথায় তাঁদের মুখে শুনতাম- বিনি পয়সার দাসী-বাঁদি রেখে দিয়েছো বা রোজগার করলে কি এসব কথা বলতে পারতে? কিন্তু সংসার সামলানোর গর্বটাও তাঁদের মুখে লেগে থাকতো।
যাইহোক আমার সব শ্মশানের রচনা যেমন গরুর রচনায় পালটে যায়, এই লেখাও ঢুকে পড়বে infertility ক্লিনিকের মধ্যে। সন্তান না হলে মনখারাপ বেশিরভাগ মেয়ের সঙ্গী হয়ে ওঠে-তা সে বাইরের কাজ করুক বা বাড়ির। সব পাওয়ার মাঝেও কোথায় যেন এক শূন্যতা। কিন্তু যে রোজ কাজে বেরোয় সে কিছুক্ষণের জন্য হলেও কাজে মধ্যে নিজেকে ব্যাস্ত রেখে এই মনখারাপটা ভুলে থাকতে পারে। কিন্তু যে সারাদিন বাড়িতে থাকে সে কী করবে? আজকাল সবারই ছোটো পরিবার, সুখী কিনা জানিনা। তাই ঘরের কাজও বিশেষ কিছু নেই। টিভি-ফেসবুক-ফোনে আড্ডা আর কতক্ষন চলবে? তারপরেও যে একাকীত্ব পড়ে থাকে সেটাকে ভরিয়ে তুলবে কীভাবে?
তাপসী তাই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এক আকাশ ভরা জল তাঁর চোখে যখন তখন নেমে আসে। Internet-এ infertility নিয়ে সব লেখা পড়ে, ভিডিও দেখে। ওই বিশেষ কদিন ছাড়া অরিত্র কাছেও বিশেষ ঘেঁষে না। আর নিজের এক মায়াবী জগত সে রচনা করেছে, যেখানে সে সাদা-কালজেস্বপ্নের জাল বোনে। অন্য কারো সেখানে প্রবেশ নিষেধ। অপর্না একটু অন্যরকম। নানারকম হাতের কাজ করে, ছবি আঁকে। পাড়ার সব কুকুরগুলোর অভিভাবক হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই তিতো স্বাদটা সে তো জিভে লেগেই আছে। আশা জেনে গেছে দোষটা ওর নয়, অমিতের। তারপর থেকেই সে এক আগুনে খেলায় মেতে উঠেছে। রোজ দুপুর-বিকেল সে আজকাল প্রেম করছে। মুঠোফোনে তার প্রেমালাপ, block করে দিলেই সে প্রেমের ইতি। কোনো hangover নেই। এ যেন তাঁর এতদিনের রাগ- দুঃখের বহিঃপ্রকাশ। পিউ ওঁর corporate এর চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিল যাতে ওঁর চিকিৎসায় কোনো অসুবিধা না হয়, তাড়াতাড়ি বাচ্চা আসে। গত ৩ বছর ধরে ওর চিকিৎসা চলছে। আগে শুধু infertilityর, আর এখন #infertility-র সঙ্গে #depression– এরও। তাই বলি, চাকরি ছেড়ে বাড়ি থাকলেই ভালো চিকিৎসা হবে না। চাকরি ছাড়লে চিকিৎসার সাফল্যের হার কি বাড়বে? সেদিন রঞ্জনা এসে বলল, আপনার prescription এর ওইখানটা একটু বদলে দেবেন- housewife টা হাফ হাউজওয়াইফ করে দিন। আপনি বলেছিলেন না কিছু করো, আমি এখন বাড়িতে শাড়ির ব্যবসা শুরু করেছি। আমার প্রথম রোজগারের টাকায় আপনার জন্য আইসক্রিম সন্দেশ এনেছি। কী অপূর্ব সে মিষ্টির স্বাদ! অনেকটা আমার হারিয়ে যাওয়া মিনিবয় আইসক্রিমের মতো।
যারা সরস্বতী নয়, শুধু ভালো লক্ষ্মীই হতে চেয়েছিল, যার ভালো #লক্ষ্মী হয়েও এক বিষন্নতায় ডুবে আছে। আজকের নারী দিবসে সেই #গৃহলক্ষ্মী-দের জানাই আমার #শ্রদ্ধা। তাঁরা যেন বিনা দ্বিধায় গর্বের সঙ্গে বলে আমি শুধু Housewife। সবার দায়িত্ব আমার ওপর। পুরো সংসারটাই আমি সামলাই।
#askindranil #indranilsaha #ivf #doctor #pregnancy #gynecologist#obstetrician #awareness #infertilityexpert #clinic #InternationalWomensDay#HappyWomensDay2019 #WomensDay #empowerment #women